আমি খানাখন্দ নদীনালার দেশের মানুষ, তাই যেখানেই যাই নদী দেখি, খাল দেখি, নৌকায় উঠি, নৌকা চালাই, নেংটি মেরে পানিতে নেমে পড়ি। পানিতে আরাম পাই। বিলেতে ব্যাপক ঠান্ডার মধ্যেও আমাকে প্রায়ই নদী, খাল, পুকুরের আসেপাশে ঘুরঘুর করতে দেখা যাচ্ছে। সুযোগ পেলেই বৈঠা নিয়ে নেমে পড়বো।
মানুষের সাথে জলাধারের সম্পর্ক অবলকন করলে সেই এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার বিভিন্ন চিত্র পাওয়া যায়। পানির সাথে শহরের সম্পর্ককে লম্বা সময়ের আবর্তে চিন্তা করলে কয়েকটা ঢেউয়ের মত উঠানামার টানাপোড়েন চোখে পড়বে।
একদম শুরুতে পানি দেখে আহলাদিত হয়ে তার পাশে মানুষ বসতি গড়ে। পানি কেন্দ্রিক জীবন জীবিকা চলে হাজার বছর। শহরের ঘরবাড়ি, রাস্তা সবকিছু পানি কেন্দ্রিক হয়। ঘরগুলো ঘাটমুখি হয়, রাস্তার দিকে থাকে ঘরের পেছন দিক, আর সামনে থাকে পানি। চলাচলের মূল বাহন থাকে নৌকা।
দ্বিতীয় ধাপে আসে গাড়ি। সকল নষ্টের মূল। গাড়ি সব কিছুর মাথা ঘুরিয়ে পানিকে পশ্চাদ্দেশ দেখাতে শেখায়। নদী ও খাল শহরের পেছন দিক বা পুরোনো দিকে পরিনত হয়। সব স্থাপনা তৈরি হয় নদী বিমুখ হয়ে। নদীর দিকে থাকে দালানের গুয়ের পাইপ। খালগুলো বাড়ির পেছনে পড়ে যায়, সেগুলোতে ময়লা ফেলে ভাগাড় বানানো হয়। নদী, খাল শ্রীহীণ হয়ে পুঁতি গন্ধময় কালো জলের নালায় পরিণত হয়।
তৃতীয় ঢেউ হচ্ছে, পূনরুদ্ধারের কাল। মানুষ আবার টের পায় জলের সাথে নষ্টামি করে টেকা সম্ভব না। মানুষ সভ্য হয়, পরিবেশের ব্যাপারে ভাবতে শিখে। তেলের গাড়ি যে একটা আপদ সেটা টের পায়। মানুষের পায়ে হাঁটা, নৌকায় চলাচল, জলাধারের পরিছন্নতা, নতুন খাল খনন এগুলোর গুরুত্ব আবার বাড়তে থাকে। তখন শহরকে নতুন করে হাঁটাহাঁটি, সাইকেল আর নৌকা কেন্দ্রিক করে ঠিকঠাক করার চেষ্টা করা হয়।
আমাদের কিন্তু দ্বিতীয় ধাপের নোংরামি থেকে পূনরুদ্ধারের কালে ফিরে আসতে খুব বেশি কষ্ট হওয়ার কথা না। আমাদের চারিদিকেই তো পানি, সকল পরিকল্পনায় ও উন্নয়নে তাকে একটু সম্মানের চোখে দেখলেই চলবে।
নিচের ছবিগুলো আজকের খাল পরিদর্শনের ছবি। বিলেতের বড়লোকি এলাকার খাল। লন্ডনের এই খালগুলো অনেক পুরোনো। এগুলো দ্বিতীয় ধাপের নোংরামির মধ্যে দিয়ে অনেক আগেই গেছে। এখন পূনরুদ্ধার পরবর্তি চতুর্থ ঢেউ চলছে। চতুর্থ ঢেউ হচ্ছে খালভিত্তিক সকল কর্মকান্ডকে আরো পরিবেশ বান্ধব করা। নৌকাগুলো ক্রমেই তেল ছেড়ে বৈদ্যুতিক হচ্ছে। খালের চারপাশজুড়ে বৈদ্যুতিক চার্জার প্লাগ লাগানো হচ্ছে বৈদ্যুতিক নৌকাগুলোর জন্য। খালের জীববৈচিত্র ঠিকঠাক করার বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।