বিদেশফেরত মাতব্বরগুলা মাঝেমাঝেই ঢাকার গরীব্সরা কিভাবে এক ডিব্বায় সব ময়লা ফেলে তা দেখে নাক সিঁটকিয়ে “গারবেজ সেপারেশনের” বিরাট আইডিয়া নিয়ে হাজির হয়। ভাইরে, গারবেজ সেপারশন কাকে বলে তা ঢাকা থেকে আগে শিখে নিয়েন।
দুনিয়ার বহু শহরে তিন চার পাঁচ রঙের ময়লা ফেলার ডিব্বা থাকে, একটায় পচনশীল, আরেকটায় কাঁচ, আরেকটায় লোহা, প্লাস্টিক ইত্যাদি। এই ডিব্বার বিভাজন ও রঙের কোন পিতামাতা নাই। একেক দেশে একেক শহরে, এমনকি একেক পাড়ায় একেক রকম। ওই পাঁচ-ছয় রঙের ডিব্বা কোথাও ঠিকমত কাজ করতে দেখিনি। ব্যাপারটা কনফিউজিং, সবাই ভুল করে, অথবা পাত্তা না দিয়ে কাঁচ ফেলার ডিব্বায় কলা ফেলে। সমস্ত রিসাইকেলেবল ময়লার বড়জোর ১০-২০% রিসাইকেল হয় বেশিরভাগ পশ্চিমা শহরে।
তা রঙ আর ডিব্বা যেমনই হোক, সম্ভবত দুনিয়ার কোন শহর ঢাকার গারবেজ সেপারশনের দক্ষতার সাথে পারবে না। কারণ, ভ্যানের চারপাশে ঝুলানো যে বড় ব্যাগগুলো দেখছেন, এখানে ৮-৯ ধরনের রিসাইকেলেবল গারবেজ ৮-৯ টা ভিন্ন ব্যাগে বেছে বেছে, গুনে গুনে আলাদা করে রাখা হয়। এক টুকরো ময়লাও এই বাছাইয়ের বাইরে যায় না। প্রত্যেক বাসার ময়লা, প্রতিদিন এভাবে আলাদা করা হয়। এবং যা কিছু রিসাইকেল করা সম্ভব তা রিসাইকেলেই যায়।
পার্থক্যটা হচ্ছে, এই প্রকৃয়াটা বিদেশফেরৎ মাতব্বরগুলার চোখের আড়ালে ঘটে। এই যে এই মামারা-ভাইয়েরা কাজটা করেন প্রতিদিন। এইটা হচ্ছে প্রাথমিক বাছায়। এরপর আরো কয়েক ধাপে বাছায় প্রকৃয়া চলে। একদম গ্র্যানুলার লেভেলে, মেটিকুলাসলি কাজটা করা হয়।
তার মানে কি আমরা ঢাকার গরিব্সরা বাসায়, অফিসে, রেস্তরাঁয় ময়লা আলাদা করবো না কখনো? করবো। তবে তার জন্য পাঁচ-ছয় রঙের ডিব্বার কোন দরকার নাই। বাসায় শুধু এটুকু নিশ্চিত করুন যেন ময়লার ভ্যান চালকদের কখনো পচা খাবারের বস্তা থেকে প্লাসটিক আর কাঁচ হাত দিয়ে ঘেঁটে বের করতে না হয়।
বাসায় দুইটা ডিব্বা রাখুন। একটায় সব ভেজা, অর্গানিক, পচনশীল জিনিস ফেলুন। আরেকটায় যাবতীয় শুকনো, অপচনশীল জিনিস ফেলুন (তার মাঝে, ভাঙা কাঁচের টুকরো, ব্যাটারি, বিষাক্ত বা বিপজ্জক বস্তু ভালোমত প্যাকেট করে ফেলুন, যেন ময়লা আলাদা করার সময় উনারা জখম না হন)। বাসার সাহায্যকারীদের বলুন শুধু এই শুকনা আর ভেজা (অরগানিক আর ইনরগানিক) দুইটা আলাদা ব্যাগে ময়লা ফেলে আসতে। এটুকু করতে পারলেই ময়লার মামাদের কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়। বাকি সেপারেশন উনারাই ভালো জানেন কিভাবে করতে হয়।