ফিরিঙ্গি লোকজনকে ঢাকা ঘুরানোর কাজটা আমি যত্ন নিয়ে করি। ঢাকার বিশেষত্ব, অভিনবত্ব, ইতিহাস, সৌন্দর্য (যেটুকু আছে) দেখাই।
ঢাকা ঘুরানোর গুরূত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে লম্বা একটা হাঁটাহাঁটি। রমনার অরুণদয় প্রবেশপথ থেকে হাঁটা শুরু করে বটমূল, রমনা রেস্তোঁরা হয়ে, শাহবাগের ফুলের দোকান, চারুকলা, ছবির হাট, শিখা চিরন্তন, স্বাধীনতা স্তম্ভ ও ভুগর্ভস্থ জাদুঘর হয়ে টিএসসি, বাংলা একাডেমি, মীর জুমলা গেট, সময় থাকলে খাজা শাহবাজ মসজিদ, তারপর কার্জন হল হয়ে শহিদুল্লাহ হলের পুকুর পাড়ে বসে চা খেতে খেতে জিরিয়ে নেওয়া।
বছর দুয়েক হলো এই পদব্রজে কাওকে নেওয়া হয়নি। এই কয়েক সপ্তা আগে, অনেক কাল পর, মহা উৎসাহে একজন ইউরোপিয় বন্ধুকে আমার এই প্রিয় হন্টনে নিয়ে গেলাম। অরুণদয় গেট বন্ধ। রমনা পার্ক নাকি বন্ধ! সংষ্কারের কাজ চলছে (জানিনা কিসের সংষ্কার)। আমরা হেয়ার রোডের ফুটপাথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মৎস ভবনের দিকে গেলাম যদি মোড়ের দিকের দরজাটা খোলা পাওয়া যায়। বন্ধ।
একটা উবার নিয়ে চারুকলা গেলাম। গেট বন্ধ। ঢুকা যেত, চারুকলার হর্তাকর্তা কাওকে ফোন দিতে পারতাম, কিন্তু আমি সাধারণত ফিরিঙ্গি লোকজনদের সামনে এধরনের আলগা সুযোগ-সুবিধা নিই না, একান্ত জরুরী ঠেকায় না পড়লে। রাস্তা পার হয়ে ভাবলাম স্বাধীনতা স্তম্ভের দিকে যাব। তার উপায় নাই। কুৎসিৎ অসভ্য মেট্রোরেল রাস্তা পার হতে দিবে না। অনেক দুর হেঁটে রাস্তা পার হয়ে আবার ফিরে আসলাম ছবির হাটের গেটে। ততক্ষণে এই ঘোর শীতকালে ঝুম বৃষ্টি নেমেছে। সোহরোয়ার্দি উদ্যানের ভেতরে একটা শেডের নিচে দাঁড়িয়ে গাছপালা, প্রেমিক প্রেমিকা দেখে আমরা হতাশ হয়ে বাসায় ফিরে গেলাম।
এই অদ্ভুত সুন্দর হাঁটাটা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে এই অসহ্য মেট্রোরেল। কি জঘন্য অবস্থা জায়গাটার! ফিরিঙ্গি তো দুরে থাক আমি নিজেই আর কোনদিন হাঁটবো না এই পথে