বাংলাদেশে ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা ও স্পামিং বিরোধী কোন আইন নাই!

এটা ২০২৪, অথচ, বাংলাদেশে স্পামিং বিরোধী, এবং ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা বিষয়ক কোন আইন নাই এখনো! বিভিন্ন আইনে, প্রজ্ঞাপনে, এখানে ওখানে কিছু নিয়মকানুন কুড়িয়ে পাওয়া যায়, যা দিয়ে তেমন কোন কাজ হয় না।

কয়েক বছর আগে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের ক্ষুদে বার্তার অত্যাচারের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিলাম। প্রথমে তাদেরকে ফোন করে, ই-মেইল করে, ম্যাসেজ পাঠিয়ে অনুরোধ করলাম এসএমএস স্পামিং বন্ধ করার জন্য। তাতে কাজ না হলে, তারা যদি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড হয়ে থাকে তাহলে হেড অফিসে অভিযোগ করে ফ্র্যাঞ্চাইজি বাতিলের চেষ্টা করবো বলে হুমকি দিলাম। তাতে কয়েক জায়গায় কাজ হলো, বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে হলো না। যেগুলোতে কাজ হয়নি, তাদেরকে কয়েকটা আইন উল্লেখ করে মামলা দিবো বললাম। তাতে কাজ হলো প্রায় সব ক্ষেত্রে। এসএমএস বন্ধ হলো।

যারা ভদ্রলোকের মত শুনেছে, বা হুমকিতে সাড়া দিয়ে মার্কেটিং মেসেজ পাঠানো বন্ধ রেখেছিল তারা হলো
১। ডোমিনোস পিজ্জা
২। নানদোজ (ওরা তো বন্ধই হয়ে গেল)
৩। গ্রামীনফোন
তবে কয়েক মাস পর কিছু কুলাঙ্গার প্রতিষ্ঠান আবার আগের মত মেসেজ পাঠানো শুরু করলো। যেমন:
১। পিৎজা হাট
২। কেএফসি

এদের মত বাকি সব প্রতিষ্ঠানই অনুরোধ, হুমকি, ধামকি খেয়ে ২-৩ মাস বন্ধ রাখার পর আবার মেসেজ পাঠানো শুরু করেছে। তার মানে, উনাদের “ডু নট ডিস্টার্ব” এর কোন নিয়মতান্ত্রিক তালিকা নাই। অথবা, উনারা পরোয়াই করেন না কারোর অনুরোধকে। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে ব্যাংকগুলো, তারা কোন কথাই শোনে না, পাত্তাও দেয় না।

আপনারা অনেকে হয়ত ভাবছেন আমি কেন সহজেই এদেরকে ব্লক করে দিই না। ব্লক করাটা আসলে কোন সমাধান না। দুইটা কারণে, এক, এই চর্চা উৎসেই বন্ধ করার জন্য আওয়াজ তুলতে হবে। সাংস্কৃতিক পরিবর্তন লাগবে, শুধু ব্লক করে এড়িয়ে গেলে হবে না। দ্বিতীয়ত, এই সব সেবা প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবা তো আমি কিনতে চাই, সেগুলোর লেনদেন এবং সরবরাহ সংক্রান্ত এসএমএস তো আমি পেতে পাই। ব্লক করে দিলে তো সেটা সম্ভব না।

ব্লক করে দিয়ে কাজ হতো যদি তারা মার্কেটিং এর মেসেজ আর লেনদেনের মেসেজ আলাদা নম্বর থেকে পাঠাতো। দেশের ব্যাংক, পণ্য এবং সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো এই হারামিপনাটি যত্ন নিয়ে ইচ্ছা করেই করে, তা হলো লেনদেনের তথ্য আর মার্কেটিং-অফারের তথ্য একই ই-মেইল ঠিকানা অথবা একই ফোন নম্বর থেকে পাঠানো হয়, যেন আপনি মার্কেটিং-অফারের মেসেজ ব্লক করতে না পারেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আইন করে এই কাজটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। লেনদেনের মেসেজ আর মার্কেটিং এর মেসেজ ভিন্ন ভিন্ন নম্বর/আইডি থেকে পাঠাতে বাধ্য করতে হবে।

“Sharing personal information with third party” এ সংক্রান্ত আইন প্রায় সব সভ্য দেশেই আছে। এর মানে হলো, আমি আপনাকে আমার ফোন নাম্বার, ঠিকানা ইত্যাদি দিয়েছি কোন একটা কাজে, বিশ্বাস করে, আপনি মনের হাউসে আমাকে না জানিয়ে সেই তথ্য বিলি বিতরণ করতে পারবেন না। এখন মনে করুন আপনি আপনার ফোন নম্বর কোন রেস্তোরাঁকে দিয়েছেন সে যেন খাবার তৈরি করা বা সরবরাহ করার জন্য আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পরে। রেস্তোরাঁ হয়ত এসএমএস পাঠানোর জন্য কোন বাণিজ্যিক সেবা ব্যবহার করে। আপনাকে এসএমএস পাঠানোর জন্য আপনার নম্বর সে তার এসএমএস পাঠানোর সেবা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে বা অ্যাপে যোগ করলো। ব্যাস এসএমএস ওয়ালা আপনার নম্বর তার আর দশটা ক্লায়েন্টের লিস্টে যোগ করে দিলো। প্রথমত, আপনাকে না জানিয়ে অথবা অনুমতি না নিয়ে রেস্তোরাঁ এই কাজটা করতে পারে না যদি সে দাবি করে থাকে যে সে তৃতীয় পক্ষের সাথে আপনার তথ্য বিতরণ করে না। দ্বীতিয়ত, এসএমএস ওয়ালা তার এক ক্লায়েন্টের ফোন নম্বরের তালিকা আরেক ক্লায়েন্টের কাছে বিক্রি করতে পারে না।

তাহলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে গণ এসএমএস পাঠাবে? প্রথমত তাদেরকে আগে ক্রেতাকে জানাতে হবে যে ক্রেতার নাম, ফোন নম্বর আরেকটা তৃতীয় পক্ষকে দেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং এসএমএস সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একই ধরনের “no sharing to third-party” চুক্তি থাকতে হবে, যেন এসএমএস ওয়ালা আপনার নম্বর মুড়ি মুড়কিরমত তার বাকি ক্লায়েন্টদের সাথে শেয়ার না করে। সেই সাথে যাবতীয় মার্কেটিং এসএমএস এর সাথে opt out অথবা unsubscribe এর ব্যবস্থা রাখাটা বাধ্যতামূলক করতে হবে। আর সবার আগে সরকারকে নিজে লাইনে আসতে হবে। জনগণকে হাবিজাবি এসএমএস পাঠিয়ে বিরক্ত করা যাবে না, যদি সে opt out করে। সরকার শুধুমাত্র জরুরী বুলেটিন জনস্বার্থে অনুমতি ছাড়া পাঠাতে পারে, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফোনের একটি বিশেষ প্রোটকলের মাধ্যমে পাঠানো হয়, এসএমএস দিয়ে না।

এখন এগুলো দেখবে কে? আর কোন আকাম কুকাম হলে শাস্তি দিবে কে? কোন আইনে এগুলোর বিচার হবে?—এর জন্যই ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা ও স্পামিং বিরোধী আলাদা আইন দরকার।

তবে সরকারকে আইন বানাতে বলতে ভয় লাগে। আইন বানাতে গিয়ে তাঁরা তাদের পোষা ভেড়ার পাল খেদিয়ে এনে বলবে দুই তিন দেশের আইন চোথা মেরে একটা কিছু লিখে দিতে, আর যেন বিষয়টাকে জটিল করা যায় তাহলে বিভিন্ন চিপায় চাপায় ঘুশটুশের বন্দোবস্ত করা যায়। ব্যাস, সব পক্ষেরই ** মারা সারা। তারপরও, লক্কড় ঝক্কড় হলেও আইন তো একটা দরকার।

Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments