খবরের কাগজের ভাষ্য মতে, আমাদের আইনশৃ্ঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীগুলো আজকাল শুধু মানুষজনকে “তুলে নিয়ে যায়” আর “আটক” করে, পরে মন চাইলে “গ্রেপ্তার দেখায়”। সভ্য পন্থায়, আইন মেনে “গ্রেপ্তার করে” না তারা। গ্রেপ্তার এখন আর ফ্যাশনেবল না। কোন ওয়ারেন্ট ছাড়া, নাম পরিচয় ইউনিফর্ম ছাড়া মাস্তানের মত তুলে নিয়ে যাওয়ার মধ্যে একটা চার্ম আছে, একটা হ্যাডম আছে, সেটাই নগ্নভাবে তারা প্রকাশ করে মজা পায়।
এই “আটক করা”, আর “তুলে নিয়ে যাওয়া”র আইনী সংজ্ঞাটা দিবেন কেও? “অভিযান”এর নামে এই কাজগুলো করার ক্ষমতা তাদেরকে কে দিয়েছে? রাষ্ট্রের সংবিধান তো তাদেরকে এই অনুমতি দেয়নি!
আমাদের সাংবিধানিক অধীকার এবং সভ্যতার প্রাথমিক শর্তের অংশ হচ্ছে—আইনী প্রকৃয়ায় গ্রেপ্তার, এবং বিনা ওয়ারেন্টে কারোর বাসায় প্রবেশ না করা। মামলা হলে পুলিশ তদন্ত করবে, তদন্তে প্রাথমিক প্রমাণ পেলে আদালতের অনুমতি নিয়ে সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা যাবে। তার জন্য তদন্তের ব্যাখ্যা দিয়ে আদালত থেকে ওয়ারেন্ট নিতে হবে, সেখানে পরিষ্কার করে লেখা থাকবে কোন মামলায়, কোন আইনে, কিসের জন্য কাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তির সাথে দ্বিপাক্ষীয় পরিচয় নিশ্চিত করে, ওয়ারেন্টের কাগজ দেখিয়ে, কাগজে লেখা সকল তথ্যের ব্যাখ্যা দিয়ে, ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় গ্রেপ্তার করতে হবে। নারী সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ অথবা গ্রেপ্তার করতে হলে অবশ্যই নারী পুলিশ সদস্য সাথে থাকতে হবে। সবার জন্যই এই আইনটা একই, এবং এর যে কোন একটি অংশের ব্যত্যয় ঘটলেই তা হবে অবৈধ, অন্যায়; কার সাথে, কোন পরিস্থিতিতে, কেন ঘটছে, কোন বাহিনী করছে তা বিবেচ্য নয়। এই আইন সকলের জন্যই সব বাহিনীকে মানতে হবে। হয়ত তারা আইন মেনে গ্রেপ্তারও করে, মিডিয়া পর্যন্ত হয়ত সেগুলো আসে না; কিন্তু যা আসে তার প্রায় সবটাই তো অন্যায়, অবৈধ “আটক” এর নাটক আর “তুলে নিয়ে যাওয়ার” ঘটনা!
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর প্রতি মহামান্য আদালত বহুবার এসংক্রান্ত আদেশ/নির্দেশ/হুঁশিয়ারি জারি করেছে। সেই নির্দেশ অমান্য করে তারা এখনো সাধারণ পোষাকে, উদ্ধত আচরণে, ভয়ভীতি দেখিয়ে মাস্তানি স্টাইলে মানুষজনকে “তুলে নিয়ে” যাচ্ছে। এগুলো নাগরিক অধীকার ক্ষুন্নকারী অবৈধ হ্যারাসমেন্ট ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।
অথচ এই ন্যাক্কারজনক অন্যায়ের কোন প্রতিবাদ কোথাও চোখে পড়ছে না। কেউ যদি দন্ডবিধী মোতাবেক কোন অপরাধ করে থাকে তাহলে তদন্ত করে ওয়ারেন্ট এনে বৈধ পন্থায় গ্রেপ্তার করে আইনী প্রকৃয়ায় বিচার করতে হবে। মাস্তানি করা চলবে না।
কোনটা বৈধ, কোনটা অন্যায়, কোনটা হ্যারাসমেন্ট, কোনটা অনধীকারচর্চা, কে অপরাধী আর কে ভিকটিম—এগুলো বেসিক জিনিস যদি আপনারা না বুঝেন, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেন, আজেবাজে ট্রোল করেন, তাহলে তো আপনাদের সাথে অন্যায়কারীদের কোন পার্থক্য রইলো না।